মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১১:৩৭ অপরাহ্ন
নিজস্ব প্রতিবেদক: লালমনিরহাটের বুড়িমারীতে গুজব ছড়িয়ে আবু ইউনুস মো. শহীদুন্নবী জুয়েলকে পিটিয়ে ও পুড়িয়ে হত্যার ঘটনায় দায়ের করা মামলায় আরো দুইজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
গ্রেপ্তাররা হলেন লালমনিরহাটের পাটগ্রাম উপজেলার শ্রীরামপুর ইউনিয়নের আউলিয়ারহাট কামাতপাড়া এলাকার শহিদুল ইসলামের ছেলে আব্দুর রাজ্জাক বাবলা (২৬) ও একই উপজেলার বুড়িমারী ইউনিয়নের উফারমারা সোনারভিটা এলাকার আবুল হোসেনের ছেলে জি এম মানিক (৪৫)। এ নিয়ে ওই ঘটনায় এপর্যন্ত ৩৮ জনকে গ্রেপ্তার করা হলো।
জেলা গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ওমর ফারুক আজ সোমবার (২৩ নভেম্বর) সকালে গ্রেপ্তারের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
ওমর ফারুক বলেন, বহুল আলোচিত শহিদুন্নবী জুয়েল হত্যায় দায়ের করা পুলিশের ওপর হামলা ও ইউপি ভবনে হামলার মামলায় অজ্ঞাতনামা আসামি বাবলা ও মানিককে গতকাল রবিবার (২২ নভেম্বর) রাতে বুড়িমারী এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। দুইটি মামলা তদন্তে ঘটনায় সম্পৃক্ততার প্রমাণ পাওয়ায় তাদেরকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এ নিয়ে মোট ৩৮ জনকে গ্রেপ্তার করা হলো।
গ্রেপ্তার ৩৮ জনের মধ্যে ১৩ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে রিমান্ড নিয়ে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ। আবু কালাম ওরফে গামছা কামাল নামে আরো একজনের পাঁচ দিনের রিমান্ড আবেদনের শুনানি আগামী বুধবার (২৫ নভেম্বর) দিন ধার্য করেছেন আদালত। এর মধ্যে মূলহোতা বুড়িমারী ইউনিয়ন শ্রমিক লীগ সভাপতি আবুল হোসেন ওরফে হোসেন ডেকোরেটর এবং মসজিদের খাদেম জোবেদ আলীসহ চারজন স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন বলেও জানান ওসি ওমর ফারুক।
গত ২৯ অক্টোবর বুড়িমারী বাজারের কেন্দ্রীয় জামে মসজিদে আসরের নামাজে অংশ নেন রংপুর থেকে আসা আবু ইউনুস মো. শহীদুন্নবী জুয়েল। নামাজ শেষে অন্য মুসল্লিরা চলে গেলেও এক বন্ধুসহ তিনি থেকে যান। মসজিদের খাদেম জুবেদ আলীর বর্ণনা অনুযায়ী, জুয়েল কোরআন শরিফ ও হাদিসের বই রাখার তাকে ঘাঁটাঘাঁটি করছিলেন। ওই সময় মসজিদের মাঠে দাঁড়িয়ে অন্য তিন-চার ব্যক্তির সঙ্গে গল্প করতে থাকা হোসেন ডেকোরেটরের মালিক আবুল হোসেন ওরফে হোসেন আলী সেখানে যান। আবুলের স্বীকারোক্তি অনুযায়ী, ওই সময় কারণ জানতে চাইলে জুয়েল তাঁকে গালি দেন। এর পরই জুয়েলকে থাপ্পড় দিয়ে মসজিদ থেকে বাইরে নিয়ে আসেন তিনি। এরপর স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানকে আবুল ফোন দিলে তিনি বাইরে থাকায় একজন মেম্বারকে ডেকে নেওয়ার পরামর্শ দেন। সেই মেম্বার এসে জুয়েল ও তাঁর বন্ধুকে ইউনিয়ন পরিষদের অফিসে নিয়ে যান। এ সময় ইউনিয়ন পরিষদের বাইরে উত্তেজনা তৈরি হয়।
ততক্ষণে সেখানে আশপাশ থেকে আসা মানুষের ভিড় জমে যায়। মসজিদ থেকে জুয়েলকে বের করে ইউনিয়ন পরিষদে নিয়ে যাওয়ার সময়ই গুজব ছড়ানো হয়। কিছুক্ষণের মধ্যে সেখানে বিপুলসংখ্যক মানুষের উপস্থিতি ঘটে। তখনই ইউনিয়ন পরিষদের ভবন ভাঙচুর করে জুয়েলকে বের করে গায়ে আগুন দিয়ে হত্যার ঘটনা ঘটে।
ঘটনার পর বিক্ষুব্ধ জনতা মহাসড়কে আগুন জ্বালিয়ে অবরোধ করে বিক্ষোভ মিছিল করে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পাটগ্রাম ও হাতীবান্ধা থানা পুলিশ, বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) ও ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা দফায় দফায় চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন। ওইসময় বিক্ষুব্ধ জনতার ছোড়া ইট-পাথরের আঘাতে পাটগ্রাম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সুমন্ত কুমার মোহন্তসহ ১০ জন পুলিশ সদস্য আহত হন।
জনতাকে ছত্রভঙ্গ করতে ১৭ রাউন্ড ফাঁকা গুলি ছোড়ে পুলিশ। রাত সাড়ে ১০টার দিকে লালমনিরহাটের ডিসি আবু জাফর ও এসপি আবিদা সুলতানা অতিরিক্ত পুলিশ নিয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন। নিহত জুয়েলের সঙ্গী যোবাইয়েরকে গুরুতর আহত অবস্থায় উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করে পুলিশ।
ঘটনা তদন্তে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে গত ৩০ অক্টোবর অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট টি এম এ মমিনকে প্রধান করে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। নিহত জুয়েলের চাচাত ভাই সাইফুল আলম, পাটগ্রাম থানার উপপরিদর্শক (এসআই) শাহজাহান আলী ও বুড়িমারী ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান আবু সাঈদ নেওয়াজ নিশাত বাদী হয়ে পৃথক তিনটি মামলা দায়ের করেন।